Header Ads

Header ADS

বিজেপির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধান বাঁধা ও উপমহাদেশের মুসলিম- ১

বিজেপির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধান বাঁধা ও উপমহাদেশের মুসলিম- ১
আখান্ড ভারাত, হিন্দতুভা, ভারাত মাহাসাংঘ
কায়সার আহমাদ
মোদি ক্ষমতায় আসার পূর্বেই বিজেপি ও আরএসএস এর প্রধান কিছু লক্ষ্য ও পরিকল্পনা আলোচনা করেছিলাম। দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষমতা নিয়ে মোদির পদ গ্রহণ, কাশ্মীর, রামমন্দির এবং সর্বশেষে NRC ও CAB পাস করে এক এক করে মোদি সরকার তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে এগুচ্ছে। প্রথমে চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল আখান্ড ভারাত নির্মাণ, কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা দিয়ে তারা বুঝে গেছে আখান্ড ভারাত নির্মাণ করা সম্ভব নয়। তাই তারা দ্বিতীয় গোলের দিকে এগুচ্ছে। তবে বিজেপি এবং আরএসএস এর মধ্যে কিছু লোক ভারাত মাহাসাংঘকে নতুন লক্ষ্য বানিয়েছে।
আখান্ড ভারাত- অর্থাৎ অখন্ড ভারত। অখন্ড ভারত বলতে প্রধানত তৃতীয় শতাব্দীর মোরেয়া সাম্রাজ্যকে বুঝানো হয়। চান্দ্রাগুপ্তা মোরেয়া ভারতের ইতিহাসে সবচে বড় অঞ্চল নিয়ে সাম্রাজ্য তৈরি করেছিলেন। একে হিন্দুদের মহা সাম্রাজ্য বলা যায়। বর্তমান আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, বার্মা, তিব্বত ও ভূটান রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত ছিল মোরেয়া সাম্রাজ্য। কোট্টর এবং বিদ্যান হিন্দুরা এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বুকে লালন করছে বহু বছর ধরে। কিন্তু এই অঞ্ছলে মুসলিমদের উপস্থিতি, প্রভাব প্রতিপত্তি এবং বিশ্ব সভ্যতা দেখে এই লক্ষ্য থেকে তারা সড়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত তারা জানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মত অঞ্চল ভারতে অন্তর্ভুক্ত হলে হিন্দুরাই ভারতে অনিরাপদ হয়ে পড়বে। তাই তারা এখন হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার দিকে মনযোগী হয়েছে।
হিন্দুতভা- ভারতে শুধু হিন্দুরাই প্রধান নাগরিক হিসেবে থাকবে বাকি দের দ্বিতীয় সারীর নাগরিকত্ব নিতে হবে। দ্বিতীয় সারীর নাগরিকত্ব বলতে নিশ্চয় তাদের কাছে ন্যাজির জার্মানিতে অজার্মানরা যেমন ছিল তা বুঝায়। এই মতবাদের আলোকে পুরো বিশ্বের সকল হিন্দু ভারতের নাগরিকত্ব পেতে পারবে। এটা বাস্তবায়নের প্রধান সমস্যা হল দুটি-
এক
ভারতে দিন দিন মুসলিমের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে পারসেন্টেজে মসুলিমদের সংখ্যা বাড়ছে সে পারসেন্টেজে হিন্দুদের সংখ্যা আবার কমছে। এমনিতেই ইন্দোনেশিয়ার পর ভারত দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। যদি মুসলিমদের সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে এক দশকে ইন্দোনেশিয়াকে পিছনে ফেলে দিবে।
দুই
সেকুলার হিন্দু। বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে যেমন সেকুলার সরকার ক্ষমতায় আছে, শাহবাগ যেমন সেকুলারদের পেয়েছে ঠিক একই ভাবে হিন্দুতভা বাস্তবায়ন করতে গেলে সেকুলার হিন্দুরা মুসলিমদের পক্ষে এগিয়ে আসবে। লক্ষ লক্ষ হিন্দুরা যারা আমেরিকা এবং ইউরোপে বসবাস করে (কর্পোরেট পিপল) তারা মুসলিমদের পক্ষ নিবে।
সমস্যা হতে উত্তরণের পথ-
প্রথম সমস্যা বা বাঁধা উত্তরণের জন্য মোদি সরকার প্রথমে 'অনুপ্রবেশকারীদের বের করো' স্লোগান দিয়ে NRC পাস এবং তা আসামে বাস্তবায়ন করে। এতে করে ভারতে কোটি কোটি লোক যারা একাত্তরের পর ভারতে প্রবেশ করেছে তাদের বের করার উপায় তারা পেয়ে যায়। জনগন কিছুটা হলেও মেনে নেয়। কিন্তু পুরো NRC বাস্তবায়ন হোক এটা বিজেপি চাইবে না, কেননা এতে করে মুসলিমদের পাশাপাশি অনেক হিন্দুদেরকেও বের করে দিতে হবে। অথচ তাদের দরকার শুধু মসলিমদের বের করা। তাই পরে CAB (যা এখন CAA হয়ে গেছে) পাস করা হল। এতে প্রথুমে 'অনুপ্রবেশকারীদের বের করো' এর আন্ডারে সকলের তালিকা করা হবে এবং পড়ে CAB লিস্ট করে অমুসলিমদের আবার নাগরিকত্ব দেয়া হবে। বাদ পড়ে যাবে শুধু মুসলিমরা। অর্থাৎ আসল স্লোগান হল 'মুসলিমদের তাড়িয়ে দাও'।
দ্বিতীয় সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় হল দুটি।
- হিন্দুদের মুসলিম বিদ্বেষী করে তোলা অথবা
- পাকিস্তানের সাথে লিমিটেড যুদ্ধ
ভারত সরকার পূর্ণ চেষ্টা করছে বর্তমান চলা কেওস চরমপন্থী মুসলিমদের কাজ বলে উপস্থাপন করতে কিন্তু এতে কাজ হচ্ছেনা। এখন অন্য উপায় তারা আপ্লাই করেছে, তা হল ৪ মাসে আকাশচুম্বী রামমন্দির বানানোর স্লোগান। এভাবে তারা মেরুকরণ করতে চাচ্ছে। সেকুলার হিন্দুদের আইওয়াশ করা হচ্ছে। মন্দির বানাতে হিন্দুদের সম্পৃক্ত করার জন্য সরকার নিজের ফান্ডে মন্দির না বানিয়ে জনগন হতে চাঁদা সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছে। চাঁদার পরিমাণ মাত্র ১১ টাকা। মোদি সরকারের একটি বড় বাঁধা হল বিপুল মুসলিম সংখ্যা। দুয়েক লাখ বা সর্বচ্চো কোটি খানেক লোকের বিরুদ্ধেও মানুষকে উস্কে দেয়া যেতে পারে তবে ২৫ কোটি মুসলিম যারা ভারতে শত শত বছর ধরে বসবাস করছে তাদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের উস্কে দেয়া সহজ হবে না, বলা যায় এটা অসম্ভব। এই ২৫ কোটি থেকে মাত্র কয়েক লাখ মুসলিম যদি জিহাদে শামিল হয় তাহলে ভারত এমনিতেই ধ্বংসের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে।
যদি প্রথম উপায়ে কাজ না হয় তাহলে তাদের কাছে দ্বিতীয় উপায় হল পাকিস্তানের সাথে লিমিটেড ওয়ার। LOC তে ফলস ফ্লাগের নামে লিমিটেড স্ট্রাইক করা হল তাদের সর্বশেষ স্ট্রাটেজি। বর্ডারে গুলি টানা বিনিময়, ফ্যান্সিং তুলে নেয়া, পাল্টাপাটি হুমকি ধমকি থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় জনগনের মাইন্ড ডাইভারট করতে এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে বিজেপি ইতিমধ্যে পাকিস্তান কার্ড ব্যবহার করছে। এটার শেষ স্টেপ লিমিটেড ওয়ার অর বিগ ফলস ফ্লাগ। এতে কেওস থেমে যাবে এবং পুরো ভারত যুদ্ধের দিকে মন দিবে, এটা বিজেপি দল বিশ্বাস করে। তাই ভারত যত উত্তপ্ত হচ্ছে LOC তে তত বেশি আর্মি মোতায়েন করা হচ্ছে। কিন্তু এটা সবচে ঝুঁকিপূর্ণ পথ।
মোদি সরকার পূর্বে এমন প্রটেস্টের আশা করেনি, তাই এখন খানিক বিপাকে পড়েছে। যদি দেড়-দুই সপ্তাহে প্রটেস্ট শেষ না হয় তবে লিমিটেড যুদ্ধ ছাড়া উত্তরণের আর তেমন উপায় থাকবে না।
এছাড়া, মেডিয়া প্রোপোগান্ডা, ব্রেইনওয়াসিং, প্রটেস্টের বিরুদ্ধে একশান নিতে নিজের লোক ঢুকিয়ে দিয়ে ধ্বংসাত্মক অবস্থা তৈরি করা, প্রটেস্টের প্রতি নাগরিককে বিষিয়ে তোলা, নেট-ফোন বন্ধ-কারফু ইত্যাদি প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে। প্রটেস্টকে মেরুকরণ করতে কংগ্রেস সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও চেষ্টা করছে, এটাও বিজেপির জন্য সমস্যা। এছাড়া আমেরিকা অথবা চীনের এতে ইন্ধন থাকা অস্বাভাবিক না।
ইংশা আল্লাহ দ্বিতীয় পর্বে ভারত মাহাসাংঘ, CAA ইস্যুর পরে ভারতের সাথে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং উপমহাদেশের মুসলিমদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করব।

No comments

Powered by Blogger.