একশ বছর পর পুনরায় চালু হওয়া দিনার ও দিরহাম
একশ বছর পর পুনরায় চালু হওয়া দিনার ও দিরহাম
কায়সার আহমাদ
![]() |
ছবি- ক্যালান্টান স্টেটের নতুন স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা |
দিনারিস্ট। যারা স্বর্ণ দিনার মুদ্রার পক্ষে কথা বলেন তাদেরকে পশ্চিমা প্রভাবিত মুসলিম ইকোনোমিস্টরা এই নামে ডাকতে পছন্দ করে। দীর্ঘ দিন ধরে আমরা দিনার এবং দিরহামের কথা বলছি, এতে অনেকের ধারনা হয় আমরা গুটি কয়েক লোক কোনো কন্সপাইরেসি থিওরি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মিথ্যে ভয় দেখাচ্ছি। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ্ এই বিষয়ে বিছিন্ন ভাবে হলেও জ্ঞানী-গুণীর এক বড় দল কাজ করে চলছে। রাষ্ট্রীয় ভাবে সবচে' বেশি কাজ হয়েছে মালয়শিয়ায়। ব্যক্তিগত ভাবে মালেয়শিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহথির মুহাম্মাদ স্বর্ণ মুদ্রা তত্ত্বের একজন বড় সমর্থক।
২০০৫ সালে তিনি প্রথম স্বর্ণ মুদ্রায় ফিরে যাবার পস্তাব করেন। তিনি যাদের থেকে প্রভাবিত হয়েছিলেন তাদের মধ্য অন্যতম হলেন শাইখ ইমরান নযর হোসাইন এবং IIUM এর ইকোনোমিক্স ডিপার্টমেন্টের সাবেক ডিন ড. আহমাদ কামিল মিরা. যাইহোক, মাহথির মুহাম্মাদ যেহেতু ক্ষমতায় ছিলেন না তাই তার উদ্যোগ তত ফলপ্রসূ হয়নি।
২০০৬ সালে মালয়শিয়ার ক্যালান্টান স্টেট সরকার রাজ্যে প্রথম স্বর্ণ মুদ্রা তথা দিনার এবং রৌপ্য কয়েন দিরহাম চালু করার পস্তাব নিয়ে আসেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ বাদওয়ী সে পস্তাব বাতিল করে দেন।
২০০৭ সালে মালয়শিয়ায় International Conference Gold Dinar Economy অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মাহথির মুহাম্মাদ। আর প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন শাইখ ইমরান নযর হোসাইন, এছাড়া ছিলেন উমার ইব্রাহীম ভাদিললো, আফ্রিকান এই নত্তমুসলিম ইসলামিক চিন্তাবীদ দিনার প্রজেক্টে অনেক কাজ করেন। তুর্কি, মোরক্কো, মালয়শিয়া এবং বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় তিনি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বেশ কিছু প্রজেক্টে কাজ করছেন। কনফারেন্সে আরো ছিলেন কানাডার প্রফেসর মাসুদুল আলম, প্রফেসর ড আহমাদ কামিল মিরা, ইরানের জাভেদ কাশীর মত ইসলামিক চিন্তাবীদ বা দিনারিস্টরা। (মুদ্রা বিষয়ে স্টাডির জন্য অনেকে আমার কাছে সোর্স খুজেন, তাদের বলব এই সকল ব্যক্তিদের বই এবং আর্টিকেল পড়তে। আরো প্রয়োজন হলে ইনবক্সে নক করবেন।)
আলহামদুলিল্লাহ্ ২০১০ সালে মুসলিম উম্মাহ একশত বছর পর আবারো শারিয়া মুদ্রা চালু হতে দেখে। এবার মুয়া'মালাহ কাউন্সিল ক্যালান্টান স্টেটকে ইসলামিক শারিয়া মুদ্রা চালু করার জন্য কনভিন্স করে ফেলে এবং প্রথমবারের মত স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা তৈরি করা হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন দিনার এবং দিরহাম দিয়ে প্রদান করার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। ২০১১ সালের মধ্যে হাজার হাজার দোকানে স্বর্ণ মুদ্রা দিয়ে লেনদেন চালু হয়ে যায়। এর পর প্যারাক স্টেট ডিনার প্রচলন ঘটায়। তবে কেন্দ্রীয় সরকার ও ব্যাংক-কর্পোরেট হাউস পুরো বিষয়কে সহজ ভাবে নেয়নি, তাই এরপরে তেমন সফলতা দেখা যায়নি। এখন উক্ত দুই রাজ্যেই দিনার এবং দিরহাম একটি গল্ড ইনভেস্টমেন্ট কয়েন হিসেবেই বেশি ব্যবহার হচ্ছে, আর কারেন্সি হিসেবে এর ব্যবহার কমে গেছে।
উল্লেখ্য ২০১৬ সালে ইরাক-সিরিয়া ইসলামিক স্টেট দিনার এবং দিরহাম মুদ্রা প্রণয়ন করে। তখন এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে ভালোই আলোচনা হয়। তাদের মুদ্রার ব্যাপ্তি ও স্বরূপ সম্পর্কে আমার তেমন জানা নেই। তাদের খিলাফার! সাথে সাথে মুদ্রা ব্যবস্থারও পতন ঘটেছে।
মাহথির মুহাম্মাদ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পরে দিনার নিয়ে কাজ করবেন এমন আশা করছিলাম। ১৯ ডিসেম্বরে কেএল সামিটে মুদ্রা বিষয়ে আবার আলোচনা শুরু হওয়ায় খুব ভালো লাগল। দু'আ করি আল্লাহ তাদের দ্বারা শারিয়া মুদ্রার বীজকে চারায় রূপান্তর করুণ। যদিও এই সকল রাষ্ট্রপ্রধানদের আমি পছন্দ করি না, তবে এটা নিশ্চয় প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এরদোয়ান পস্তাব দিলেন মুসলিম রাষ্ট্র ডলারের পরিবর্তে নিজস্ব কারেন্সি ব্যবহার করার, এক ধাপ এগিয়ে হাসান রুহানি বললেন, গোল্ড বেসড ডিজিটাল ক্রিপ্টোকারেন্সির কথা। যাইহোক এদুটো অস্থায়ী সমাধান হতে পারে, স্থায়ী সমাধান কেবল মাত্র দিনার ও দিরহামেই রয়েছে।
No comments