Header Ads

Header ADS

কেমন হবে তুর্কী রাশিয়া সিজফায়ার ডিল?

কেমন হবে তুর্কী রাশিয়া  সিজফায়ার ডিল? 
মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।   

জয়-পরাজয় কোন বাইনারি হিসেব নয়। তুর্কি-রাশিয়া ডীল নিয়ে আলোচনা করতে যাওয়ার আগে অবশ্যই তাকাতে হবে তুর্কির আরেক ফ্রন্ট লিবিয়ার দিকে যেখানে তুর্কি ক্লিয়ারলি অড পজিশনে আছে। সিরিয়া যদি তুর্কির বাম চোখ হয় তাহলে লিবিয়া অবশ্যই তুর্কির ডান চোখ। দোরগোড়ায় অবস্থিত সিরিয়ায় তুর্কি যেকোন সময়ে পাশার দান উলটে দিতে পারবে কিন্তু সিরিয়া নিয়ে বেশী ব্যস্ত থেকে (যেটা কিনা ইউরোপ ও আরব অটোক্রেটগুলো আশা করছে) লিবিয়ার দিক থেকে চোখ বন্ধ করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
তুর্কি কয়েক দিনে আসাদের বাহিনীর সামরিক ক্যাপাবিলিটির যে ক্ষতি করেছে সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে এই ডীলে তুর্কির পরাজয় হয়েছে মনে হবে। তবে তুর্কি যেকোন সময় যে সিরিয়া বাহিনীর জন্য ধংসাত্বক হয়ে উঠতে পারে এই কন্সেপ্টটা প্রিভেইল থাকা অবস্থায় তুর্কি স্বেচ্ছায় হাত গুটিয়ে নিয়েছে এটা একটা ডমিনেটিং পয়েন্ট।
সেই সাথে আরেকটা আলোচনা জারি থাকছে যে আমেরিকা ও ন্যাটোর অসহযোগিতার কারণে তুর্কি হাত গুটিয়ে নিল এবং দোষ কিছুটা তাদের উপরও বর্তালো। এর কন্সিকুয়েন্স হিসেবে তুর্কি এখন রিফুজি কার্ড খেললেও কারও কিছু বলার থাকবে না।
তুর্কি ইউরোপকে রিফুজি নিয়ে ব্যস্ত রেখে কিছু দিনের জন্য আরেক ফ্রন্ট লিবিয়ার দিকে মনোনিবেশ করতে পারবে। যেটা কিনা ইউরোপের বাঁধার কারণে হতে পারছিল না। এই ক্ষেত্রে কয়েকটি পয়েন্ট মনে রাখা ভাল।
এক, ইউরোপ সিরিয়ার বিষয়ে সরাসরি দায়ী না হলেও লিবিয়ার বর্তমান ক্রাইসিসের জন্য বহুলাংশে দায়ী। তারাই প্রথমে গাদ্দাফির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে, তারাই এখন লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ ইচ্ছে করে জারি রেখেছে। তাই সিরিয়ান রিফুজি নেওয়ার ব্যাপারে কোন এক্সকিউজ কাজে লাগলেও লিবিয়ান রিফিউজি নেওয়ার ব্যাপারে কোন অযুহাত কাজে লাগবে না।
দুই, দেরনা, বেনগাজিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হাফতারের অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা মানুষসহ ধরলে ত্রিপলি ও মিসরাতা সহ জিএনএ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রায় চল্লিশ লাখ মানুষের বসবাস করে যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০%। এই জনগোষ্টির বেশিরভাগ হাফতার বিরোধী ও ইসলামিস্ট মনোভাবাপন্ন এবং তাদের দুর্গতির জন্য ইউরোপের ডুয়াল রোলকে দায়ী করে।
তিন, যদি ত্রিপলি-মিসরাতার পতন ঘটে তাহলে ব্যাপক গনহত্যার মুখে পালিয়ে তারা সরাসরি ইউরোপের দিকেই ছুটবে কারণ তারা গাদ্দাফির চেয়েও জঘন্য হাফতারের অধিনে থাকতে চাইবে না।
চার, ইউরোপীয়রা কুর্দি বা অন্য কোন সেকুলার রিফুজি গ্রহনে যতটা আগ্রহী সিরিয়ার রিফুজিদের মত লিবিয়ার ইসলামি রিফুজিদের নেয়ার ব্যাপারে ততটাই অনাগ্রহী। কারণ তারা সেকুলারদের থেকে পালিয়ে এসে নিশ্চয় ইউরোপের সেকুলার ভেলুজ গ্রহণ করে ইউরোপের কালচারের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে না। বরং জেদের বশে নিজেদের মুসলিম ভ্যালুজ দিয়ে ইউরোপকে আচ্ছন্ন করবে। কিন্তু এদিকে লিবিয়ান রিফুজি না নিয়ে ইউরোপিয়দের কিছু করারও নেই।
উপরোল্লেখিত বিষয় বিবেচনায় নিলে বলতে হবে এরদোয়ান সিরিয়া থেকে একটু পিছু হটে তার মেডিটেরিয়ান কার্ড নতুন করে সাজাতে চাইছেন। যে ইউরোপ এতদিন লিবিয়া-তুর্কি মেরিটাইম বাউন্ডারি নিয়ে তুর্কির উপর বিভিন্ন অবরোধ আরোপের পরিকল্পনা করছিল তারা ইতিমধ্যেই রিফুজি সমস্যা নিয়ে তুর্কির দ্বারস্থ হতে বাধ্য হচ্ছে। এই দিক চিন্তা করলে ইদলিব ডীলকে পরাজয় পরাজয়ের পরিবর্তে নতুন খেলা শুরুর হাতিয়ার বলে মনে হবে।
এদিকে লিবিয়া ফ্রন্টে রাশিয়া আগের মত তুর্কি বিরোধী হতে পারবে না। কে জানে হয়তো পুতিনের সাথে এব্যাপারে এরদোগানের অলিখিত কিছু এগ্রিমেন্টও হয়েছে। পুতিন যদি লিবিয়ায় সহযোগিতার পরিবর্তে উল্টোটি করে সে ক্ষেত্রে অতি ভংগুর ইদলিব চিসফায়ার (যেটা কিনা রাশিয়ার জন্য বিরাট অর্জন) সেটা মুহুর্তেই নাই হয়ে যাবে। কারণ আসাডিস্ট বাহিনী কর্তৃক চিসফায়ার ভায়োলেশনের ডজন ডজন প্রমাণ তুর্কির হাতে চলে আসবে। মনে রাখতে হবে ন্যাটো সদস্য তুর্কির মত রাশিয়াও কিছুতেই চায়না তুর্কি-রাশিয়ার সরাসরি যুদ্ধ।
ইদলিব চিসফায়ার যে টিকবেনা এটা পাগলেও বোঝে। বাশার বাহিনীর মস্তিস্ক আচ্ছন্ন হয়ে আছে কিভাবে আগের ডিএসকেলেশন ও চিসফায়ার একতরফাভাবে লংঘন করে একের পর একের বিজয় পকেটে ভরা গেছে। তারা একই ধরনের আচরণ এখানেও করবে এটা প্রায় নিশ্চিত। এর প্রেক্ষিতে কিছু পয়েন্ট মাথায় রাখলে ভবিষ্যৎ বুঝতে সুবিধা হবে।
এক, মস্কো বৈঠক থেকে বেড়িয়ে প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনেই এরদোগান ঘোষণা দিয়েছেন ভবিষ্যতে বাশার বাহিনীর যে কোন লঙ্ঘনের কঠিন জবাব দেয়ার রাইট তুর্কির জন্য সংরক্ষিত। অর্থাৎ পুতিনের এই কন্সেন্ট আগেই নিয়ে নিয়েছেন তিনি।
দুই, তুর্কি ঘোষনা দিয়েছে বাশার বাহিনী কর্তৃক অবরুদ্ধ অবজারভেশন পয়েন্টগুলো তারা সরাচ্ছেনা। হতে পারে জনমত বিগড়ে যাওয়ার ভয়ে তাতক্ষনিকভাবে এটা তারা করছেনা। অথবা তারা সামনে কয়েকদিনের জন্য বারগেইনিং চিপ হিসেবে এটাকে রেখে দিল। অথবা তারা হয়তো সরাবেইনা।
তিন, চুক্তির পরের দিনই তুর্কি থেকে আরো ১৫০ ট্যাংকসহ সাজোয়া বহর ইদলিবে প্রবেশ করেছে। যেটা অন্য কিছু মিন করে।
চার, এরপর আবারো সিরিয়া-তুর্কি সংঘর্ষ হলে রাশিয়ার মোকাবেলায় অলরেডি চাপে পড়া ইউরোপ বাধ্য হয়ে তুর্কির পাশে দাঁড়াবে কারণ রিফুজি ঠেকাতে ইউরোপের এছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। হয়তো তখনই শুরু হবে বাশারের দিনগোনা। আর যাইহোক রাশিয়া কিছুতেই ন্যাটোর মুখোমুখি দাঁড়াবেনা। তখন পলিটিক্যাল সলিউশন হিসেবে রাশিয়া বাশার কে মাইনাস করতে বাধ্য হবে।

No comments

Powered by Blogger.