শাশুড়ি-পুত্রবধূ সম্পর্কের একাল-সেকালঃ পুরুষের কাপুরুষতা এবং বিবাহিত ও বিবাহ ইচ্ছুকদের প্রতি কিছু উপদেশ ।কায়সার আহমাদ
শাশুড়ি-পুত্রবধূ সম্পর্কের একাল-সেকালঃ পুরুষের কাপুরুষতা এবং বিবাহিত ও বিবাহ ইচ্ছুকদের প্রতি কিছু উপদেশ।
কায়সার আহমাদ।
একটি সময় ছিল, কন্যার পিতাকে খুব ছোট হয়ে থাকতে হত, নববধূও বেশ ভয়ে ভয়ে থাকত না জানি শ্বশুর বাসায় তার সাথে কেমন আচরণ করা হবে। নববধূ খুব নিচু হয়ে খুব বিনয়ী হয়ে চলত। স্বামীর আত্মীয়রা খোঁটা দিত। পুরো হিন্দু কালচারের মত। এখানে নববধূ বা মেয়েরা হল শ্লেচ্ছ অর্থাৎ নিচু জাতের লোক। আর ছেলে এবং তার পরিবার হল ব্রাহ্মণ বা উঁচু জাতের। অধিকাংশ স্ত্রী'র জীবনে এমন সময় এসেছে, যখন স্বামী ও শাশুড়ি মিলে তাকে আচ্ছামত মারত। এখন এই সব নেই, অনেকটা কমে গেছে। একদম নিম্নবিত্ত ও মাদক সেবীদের সমাজেই কিছুটা ঘটে থাকে। এবং বাকিগুলো রেয়ার কেইস।
কায়সার আহমাদ।
একটি সময় ছিল, কন্যার পিতাকে খুব ছোট হয়ে থাকতে হত, নববধূও বেশ ভয়ে ভয়ে থাকত না জানি শ্বশুর বাসায় তার সাথে কেমন আচরণ করা হবে। নববধূ খুব নিচু হয়ে খুব বিনয়ী হয়ে চলত। স্বামীর আত্মীয়রা খোঁটা দিত। পুরো হিন্দু কালচারের মত। এখানে নববধূ বা মেয়েরা হল শ্লেচ্ছ অর্থাৎ নিচু জাতের লোক। আর ছেলে এবং তার পরিবার হল ব্রাহ্মণ বা উঁচু জাতের। অধিকাংশ স্ত্রী'র জীবনে এমন সময় এসেছে, যখন স্বামী ও শাশুড়ি মিলে তাকে আচ্ছামত মারত। এখন এই সব নেই, অনেকটা কমে গেছে। একদম নিম্নবিত্ত ও মাদক সেবীদের সমাজেই কিছুটা ঘটে থাকে। এবং বাকিগুলো রেয়ার কেইস।
পুত্রবধূর রিভেঞ্জ
যুগ বদলেছে, আগের থেকে আধুনিক হয়েছে। এর মধ্যে ফেমিনিস্ট বা নারী স্বাধীনতার বিপ্লব ঘটেছে। ভারতীয় উপমহাদেশেও
পুরুষরা নীরবে নারীদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছে। নারীদের বললে ভুল হবে, বলা যায় নিজ নিজ স্ত্রীদের স্বাধীনতা দিয়েছে। দুনিয়া
পুরো উল্টে গেছে। যুগ যুগ ধরে মার খেয়ে আশা পুত্রবধূরা রেভেঞ্জ নেয়ার সুযোগ পেয়েছে। এখন হাজবেন্ডকে সাথে নিয়ে
শ্বশুর-শাশুড়িকে আচ্ছা মত মারতে পারছে। মা-বাবা থেকে আলাদা করে পুরুষকে এক সেবাদাস বানিয়ে মানসিক প্রশান্তি
পাচ্ছে। বলা যায় আগে মা-ছেলে মিলে পুত্রবধূকে মারত আর এখন ছেলে-বৌমা মিলে মাকে পিটাচ্ছে। একেই বলে রিভেঞ্জ।
উভয় ঘটনায় দেখা যায় এক নারী আরেক নারীর উপর জুলুম করছে। আগে শাশুড়ি বৌমার উপর এখন বৌমা শাশুড়ির উপর।
আর পুরুষ? ইল্লা মা সা আল্লাহ। প্রায় অধিকাংশ পুরুষ কাপুরুষ ছিল। তারা কাপুরুষ ছিল যখন তারা স্ত্রীকে পিটাত। তারা আরো
বেশি কাপুরুষ হয়ে গেছে যখন স্ত্রীকে সাথে নিয়ে, যার পদ তলে বেহেস্ত সে মাকে পিটায়। লা হাওলা ওয়ালা কু'ওয়াতা।
পুরুষের কাপুরুষতা
পুরুষরা এত বড় কাপুরুষ হল কি করে? নারীর প্রতি এত দুর্বলতা? আল্লাহ নারীদেরকে পুরুষের অধীনে করে দিয়েছেন। পুরুষের
দায়িত্ব হল নারীকে বুঝানো প্রয়োজনে শাসন করা কিন্তু এই পুরুষরা বিয়ের প্রথম সপ্তাহে নারীর অধীন হয়ে যায়। নারী তার উপর
কর্তৃত্ব করে, তাকে শাসন করে। বলা যায় স্ত্রীর কমল চুল তার পায়ের জিঞ্জির হয়ে দাঁড়ায়। স্ত্রীরা চায় স্বামী তার কাছে গোলাম হয়ে
থাকুক। আল্লাহ পুরুষকে পরিবারের কর্তা বানিয়েছেন। নারী চায় এই কর্তাকে তার দাস বানিয়ে রাখতে। অথচ পুরুষের কাজ ছিল মা ও স্ত্রী উভয় নারীর মধ্যে ন্যায়নীতি কায়েম করার, উভয়কে বুঝানো ও শাসন করার। কিন্তু কাপুরুষরা একজনের প্রতি দুর্বল হয়ে
থাকে। অনেক মা'কে দেখেছি খুব বেশি বয়সে সন্তানকে বিয়ে দেয়। তারা মনে করে আগে বিয়ে দিলে পুত্র হাত থেকে বেরিয়ে
যাবে। যাইহোক আমি বাস্তব জীবনে অনেক এমন ঘটনা দেখেছি শুনেছি তার কিছু শেয়ার করি। ঘটনা গুলোতে আমাদের জন্য
শিক্ষা রয়েছে।
বাস্তব জীবনের ঘটনা থেকে কিছু শিক্ষা
ক) মা-বাবার এক মাত্র ছেলে। মায়ের প্রতি খুব যত্নশীল। মা যতই খারাব কিছু করুক সে মুখে ওহ শব্দ পর্যন্ত করত না।
আত্নিয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী সকলে তার অনেক প্রশংসা করত। অন্য মা'রা সন্তানকে বলত, "দেখ তাকে, সে তার মায়ের প্রতি
কত ভালোবাসা দেখায়, আর তোরা?" আমি মনে করি এই রঙ্গিন জগতে ছেলের বেশি দিন অবিবাহিত থাকা কষ্ঠকর। কারণ বুঝ
হওয়ার পর থেকে ছেলের জীবনে একটি শূন্যতা রয়েছে, একটি পিপাসা রয়েছে। মানসিক, শারীরিক, আত্মিক পিপাসা। যা সময়
মত পূরণ হওয়া উচিত। কিন্তু মায়েরা সে পিপাসার কথা জানে না। তাই ছেলের বিয়েও করায় না। এতে সময় পার হয় ছেলের মনে পিপাসা আরো বৃদ্ধি পায়। ধীরে ধীরে পিপাসা তাকে সব ভুলিয়ে দেয়। তার অবস্থা হয় মরুভূমিতে ছুটতে থাকা মুসাফিরের মত।
যার কাছে পানি নেই। হঠাৎ পানি পেয়ে সে সব ভুলে যায় এবং গোগ্রাসে গিলতে থাকে। এমনি একটি সময়ে মা সন্তানের বিয়ে
দেয়। বিয়ের প্রথম দিনেই এত দিনের তৃষ্ণা মিটে। সে বুঝতে পারে এটাই ছিল তার তৃষ্ণা (আজ কাল যুগে তৃষ্ণা শুধু শারীরিক।
আত্নিক পিপাসা ভাবাও হাস্যকর)। বিয়ের কয়দিন পরে এক সকালে কোমল চুলের স্পর্শে হাজবেন্ড ঘুম থেকে উঠে, আর নববধূ
তখন বলে "বেবি জানো, তুমার মা না আজকে আমাকে এমন এমন বলেছে......আমি খুব কষ্ট পেয়েছি...ব্লা...ব্লা।" এতেই হল
কাজ ছেলে উঠে মায়ের কাছে গিয়েই, ''তুমি (আগে আপনি করে ডাকত) এই সব কি বলেছে তাকে? তাকে কিছু বলবে না বলে
দিলাম অনেক খারাব হবে কিন্তু।" যাইহক সে পরিচিত ভাইয়ের সাথেও এমনি কিছু ঘটল। মায়ের এত আদুরের দুলাল বিয়ের দু
মাসেই বলে সে আলাদা থাকবে। যদিও তার পরিবারে মা আর বাবা ছাড়া কেউ নেই। বাবাও সারাদিন বাহিরে থাকেন। এখন
অনেকে তাকে দেখে আফসোস করে আমি করি না আমি তো জানি রিজন কি, রিজনটা এখন আপনিও জানেন।
খ) এখন একজন ভদ্রমহিলার জীবন কাহিনী বলি। মহিলাটি খুব পরহেজগার, দীর্ঘদিন আগেই তার স্বামী মারা গেলেন। তিনটি
ছেলে আছে তার। প্রথমে বড় ছেলে সংসার চালাতেন। খুশী মনে তিনি তার বড় ছেলের বিয়ে করালেন, কয়েক বছর পরে বড়
ছেলে আলাদা হয়ে গেলন। তিনি অনেক ধনী। কয়েকটি বাড়ি আছে। আছে ফ্লাট এবং গাড়ি। যাইহোক পরিবারের হাল তুলে
নিলেন মেজ ছেলে। খুব কষ্ট করলেন তিনিও, বাসা ভাড়া খাওয়া দাওয়া সব খরচের ব্যবস্থা করতে সারা দিন ব্যস্ত থাকতেন। মা
আবারো খুশী মনে তার বিয়ে দিলেন। সে আগের অবস্থা এবারো। বড় ছেলের মত তিনিও কয়েক বছরে আলাদা হয়ে গেলন।
তিনিও খুব ধনী হয়েছেন। আলাদা হওয়ার পরেই কয়েকটি বাড়ি কিনলেন, স্ত্রীর নামে কিনলেন সবচেয়ে বড় বাড়িটি। গাড়ি কিনবেন এখন। মা এখন বৃদ্ধ খুব কষ্টে সেই আগের অন্ধকার কুটিতেই আছেন, সব চেয়ে ছোট ছেলে কোন মত এখন ঘর চালাচ্ছে। মায়ের আগে থেকেই অনেক গুলো রোগ ছিল। নতুন করে হয়েছে আরো কয়েকটি। চোখেও দেখতে পান না অপারেশন করতে হবে। কিন্তু দুই ছেলের এই সবের প্রতি নো-কেয়ার ভাব। এক ছেলে তার বড় সন্তানকে কানাডায় পাঠিয়েছেন, আর ছোট ছেলেকে গাড়িতে করে ব্যয়বহুল ইংলিশ মেডিয়াম স্কুলে। আর ভদ্র মহিলার মেঝো ছেলে মা থেকে আলাদা হওয়ার সময় সমাজকে বলেছিলেন, "আমি
অনেক বড় বড় মুফতি থেকে ফতোয়া নিয়ে এসেছি, আমি কোন ভুল করিনি।" বৃদ্ধা মহিলা এখন খুশী হয়ে তার ছোট ছেলের বিয়ে দিচ্ছেন। তিনি সারা দিন হাত তুলে দুয়া করেন তিন সন্তানের জন্য। আমি তাকে দেখেছি। তাকে দেখলে আমি বুঝি আমি এক
জান্নাতি নারীকে দেখতেছি। আমি মনে করি আল্লাহ অনেক সময় আমাদের উপর আযাব প্রেরণ করেন না এই সব কিছু
পরহেজগার বান্দা ও বান্দির জন্যে।
গ) এক বৃদ্ধা মহিলাকে চিনতাম তার ৫ তলা বাসা। চার তালার এক এক ফ্লোরে চার পুত্র নিজ নিজ পরিবার নিয়ে থাকে আর বৃদ্ধা মা থাকেন সিঁড়ির পাশের একটি ঘরে। বৃদ্ধা মা প্রতি দিন খাবার রান্না করেন। মাঝে মাঝে তার কন্যারা খাবার পাঠায়। কাপুরুষ
সন্তানরা তাদের স্ত্রী'কে আদেশ করতে পারে নি কমপক্ষে তিন ভাই এক এক বেলা করে মাকে খাবার দিবে। আরে কাপুরুষ যে
মা নিজে না খেয়ে তোকে খাওয়াইছে আজ তুই তাকে না খাওয়ায়ে নিজে খাচ্ছিস কি করে?
ঘ) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের সাবেক এক শিক্ষকের খবর দেখেছিলাম ইউটিউবে। প্রতিষ্ঠিত সন্তানরা
থাকতেও এই বৃদ্ধ বয়সে তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে জীবন কাটাচ্ছেন। বৃদ্ধ বাবা বলছিলেন, "জীবনের সব কিছু ব্যয়
করেছি সন্তানদেরকে শিক্ষিত করে মানুষ করে তুলার জন্য। আজ তারা প্রতিষ্ঠিত।" কিন্তু কারোর ঘরেই পিতা মাতার জন্য একটু
জায়গা হল না। আসলে ধর্মীয় শিক্ষা নেই, আল্লাহর ভয় নেই, পরকালের বিচারের বিশ্বাস নেই, এই সব শিক্ষা না দিয়ে শুধু
বস্তুবাদী শিক্ষা দেওয়ার ফলেই এমন হয়েছে। বৃদ্ধ জানেন না যে, তার সন্তানকে তিনি মানুষ বানাতে পারেন নি। বরং শুধু
বস্তুবাদী শিক্ষা দিয়ে কাপুরুষ বানিয়েছেন।
ঙ) এক নিউজে পড়েছিলাম সন্তানরা মাকে আলাদা করে দিয়েছিল, তিন নিচ তলায় থাকতেন। বৃদ্ধা বেচারি একদিন মারা
গেলেন, কিন্তু কেউ জানতে পারল না। কয়েকদিন পরে তার লাশের গন্ধ বের হওয়ায় তারা মায়ের রুমে গিয়ে দেখে মা মৃত
অবস্থায় পরে আছেন। এই রকম অনেক উদাহরণ আমরা সকলেই জানি। অনেক হত্যার মত ঘটনাও শুনেছি, যেখানে পুত্র ও
পুত্রবধূ মিলে মা ও বাবাকে হত্যা করেছে। এই সব এখন স্বাভাবিক। যাইহোক এই কাপুরুষ ছেলেরা তো মা বাবা'র হক বিনষ্ট করেই পাশাপাশি স্ত্রীর প্রতি এত বেশি দুর্বল হয়ে পরে যে আল্লাহর বিধানের পরওয়া করে না।
চ) এক ভদ্রলোককে আমি চিনি। ধনী ব্যবসায়ী। জ্ঞান-যোগ্যতাও বেশ ভালো আছে। কিন্তু সামাজিক বা পারিবারিক কোন সময়
তিনি কোন বিষয়ে তার ওয়াইফ থেকে উপদেশ না নিয়ে কথা বলেন না। কোন বিষয়ে কথা হলে তিনি সেখান থেকে উঠে তার ওয়াইফকে জিজ্ঞাস করে আসেন। মাঝে মাঝে তার স্ত্রী সবার সামনে তাকে চুপ করিয়ে, তাকে আদেশ দেন। এমনি একটি
পরিবার আমি দেখেছি, একটি পারিবারিক শালিসে, তাদের কর্তার সাথে কথা বলতে গেলে, এক মেয়ে (পুত্র বঁধু) বলে, "এখানের
কেউ কিছু বুঝবে না, আমার সাথে কথা বলুন। এই পরিবারের সব কিছু আমি হ্যান্ডেল করি।" পরিবারের মূল কর্তা ছিলেন বাবা
আর তারপর সেই মেয়ের স্বামী কিন্তু বেচারা স্বামীও স্ত্রী থেকে এত ভয় পান যে তিনিও সুর মিলিয়ে বললেন "জি, আমরা বুঝব না
সব তার সাথে বলুন।" যদিও মেয়েটার শ্বশুর বেশ শিক্ষিত ও যোগ্য।
ছ) এক ভাইকে আমি বেশ ভালো করে চিনি। তার দাঁড়ি রাখার খুব ইচ্ছে, কিন্তু তার স্ত্রী বাধা দিয়ে বলে "এখন না বয়স হলে রেখ,
গালে জঙ্গল আমার ভালো লাগে না।" আমি বেচারাকে দেখেছি তার মনের আফসোস বুঝেছি। কিন্তু তিনিও কাপুরুষ। ইসলাম
বলে স্ত্রীকে কয়েক স্টেপে বুঝাবে তাও যদি না মানে তবে তাকে তালাক দিয়ে দিতে হবে। আরেক ভাইকে দেখলাম তিনি প্রাক্টিসিং মুসলিম। কিন্তু স্ত্রী বেপর্দা করে। স্ত্রীকে অনেক বুঝিয়েও পর্দা করাতে পারছে না।
জ) এমন অনেক ভাই আছেন যারা প্রথম ছেলে সন্তানকে মাদ্রাসায় বা দীনি শিক্ষা দিতে ইচ্ছুক। তারা আমাকে বলেন ভালো
দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খোঁজ দিতে। বেশ আত্নবিশ্বাস নিয়ে বলেন। কিন্তু আমি মনে মনে হাসি, ভাবি সন্তান আগে বড় হোক,
তারপরে স্ত্রীর শাসনে তিনি নিজেই গোলামের মত করে প্রতিদিন সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যাবেন। তারা এত দুর্বল যে স্ত্রীকে এটাও
বলতে পারে না্ "আমি সন্তানকে দীনি শিক্ষা দিব, আমি দাঁড়ি রাখব, তুমাকে হিজাব করতে হবে।" হায়রে কাপুরুষ। পুরো পুরুষ জাতিকে তুমি লজ্জিত করছ।
নারীর দাসত্ব সম্পর্কে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন- "পুরুষের হৃদয় যদি কোন নারীর সাথে এঁটে যায়, যদিও সে নারী তার জন্য বৈধ হয়, তাহলেও তার হৃদয় থাকে ঐ নারীর কাছে বন্দি। নারী তার অধিপতি হয়ে বসে, পুরুষ তার ক্রীড়নকে পরিণত হয়, যদিও সে প্রকাশ্যে তার অভিভাবক; কেননা সে তার স্বামী। তবে, বাস্তবে সে নারীর কাছে বন্দি, তার দাস। নারী যদি জানতে পারে যে পুরুষ তার প্রেমে মুগ্ধ। এমতাবস্থায় নারী তার উপর আধিপত্য চালায়, জালেম ও স্বৈরাচারী শাসক যেমন তার মাজলুম, নিষ্কৃতি পেতে অপারগ দাসের উপর শাসন চালায়, ঠিক সেভাবেই নারী তার প্রেমে হাবুডুবু-খাওয়া পুরুষের উপর শাসন চালায়। বরং এর থেকেও বেশি চালায়।"
কিয়ামতের আলামত ও একটি হাদিস
কিয়ামতের অন্যতম একটি নিদর্শন হচ্ছে- মায়ের অবাধ্য হয়ে স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করা, এবং পিতাকে দূরে ঠেলে বন্ধু-বান্ধবকে কাছে আনা। (তিরমিযী - ২২১১) "কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না অশ্লীলতা-বেহায়াপনা বৃদ্ধি পাবে, আত্নীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হবে এবং প্রতিবেশীর সাথে দুর্ব্যবহার করা হবে।" (মুসনাদে আহমাদ- ৬৫১৪)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ঐ লোক হতভাগ্য! ঐ লোক হতভাগ্য! ঐ লোক হতভাগ্য! জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কার সম্পর্কে একথা বললেন? নবী করীম (ﷺ) বললেন, যে লোক পিতা-মাতার একজন কিংবা দু’জনকে তাদের বৃদ্ধ বয়সে পেল অথচ জান্নাতে দাখিল হল না, সে হতভাগ্য’ (মুসলিম হা/২৫৫১)। অর্থাৎ তাদের সাথে সে সময় ভাল ব্যবহার করলে সে জান্নাতে যেত। সে জান্নাত পেয়েও জান্নাতে গেল না, সে বড় হতভাগ্য।
বিপদে ভাই ও বোনকে সাহায্য না করার পরিণতি
একটি হাদিসে পড়েছিলাম। মসজিদে নববী থেকে দূরে বসবাসরত দুই ভাই পালা করে একদিন পর পর রাসুল (ﷺ) এর মজলিসে উপস্থিত হত। এভাবে উপস্থিত ভাই অনুপস্থিত ভাইয়ের কাছে রাসুল (ﷺ) এর নসিহত সংবাদ জানিয়ে দিত। এক দিন এক ভাই রাসুল (ﷺ) কে এসে বলল আমার ভাইটা সে কিছু করে না, আমি কাজ করি এবং সে বসে থাকে। এখন আমি কি তার ভরনপোষণ বন্ধ করে দিব? রাসুল (ﷺ) জবাবে বললেন এমনও হতে পারে আল্লাহ তার জন্যই তোমাকে রিজিক দিচ্ছেন।
বর্তমানে সমাজে এমন অনেক পরিবার আছে যেখানে এক ভাই তার ভাই বা বোনের সংসার চালাতে সাহায্য করে। কিন্তু বিয়ের
পরে স্ত্রীর ভয়ে স্বামী এই সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। যদি নিজে সচ্ছল হন বা এমন আর্থিক অবস্থা থাকে যে ভাই বা বোনকে
সাহায্য করতে পারেন তবে সাহায্য বন্ধ করা অন্যায়। হতে পারে আল্লাহ আপনাকে রিজিক দিচ্ছেন সেই ভাই বা বোনের জন্য।
এক পরিচিত ব্যক্তিকে দেখেছি। তারা দুই ভাই এক সাথে থাকতেন উভয়ে সংসারের হাল ধরেছিলেন। কিন্তু এক সময় বড় ভাই
এক জটিল রোগে আক্রান্ত হলেন। দায়িত্ব বেড়ে গেল ছোট ভাইয়ের। তিনি কয়েকমাস বড় ভাইকে টানলেন। রোগ আরো বেড়ে
গেল। তার পারালাইসিস হল। নড়া চড়াও বন্ধ। ছোট ভাইয়ের এত ইনকাম আছে যে সে পুরো সংসার একা চালাতে পারতেন কিন্তু
তার স্ত্রী বেকে বসে। স্ত্রীর দাপটে প্যারালাইসিস ভাই, বৃদ্ধ মা এবং অসহায় ভাবি-ভাতিজাদেরকে ফেলে নিজে আলাদা হয়ে গেলেন। আমি দেখেছি সেই ব্যক্তিকে। একা একা কাঁদতেন তার ভাই ও মায়ের জন্য। কিন্তু তার স্ত্রীকে এতটাই ভয় পেত যে কিছু বলতে
পারতেন না। দুই মাস পরে ভাই মারা গেলেন। আমি মনে মনে ভাবতাম সেই ব্যক্তি যে অন্যায় করেছে আল্লাহ তাকে অবশ্যই
পাকরাও করবেন। এক বছরের মাথায় আল্লাহ পাকরাও করলেন। ঋণ গ্রস্থ হয়ে গেলেন। মানুষের কাছে হাত পেতে খেতে হচ্ছে
তাকে। তারও কয়েকমাস পরেই তিনিও প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হলেন। এখন বেড থেকে ধীরে ধীরে উঠেন আর খুব অল্প করে
হাঁটেন। যদিও সবাই বুঝেছিল তিনি বাঁচবেন না। হয়ত আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে শিক্ষা দিচ্ছেন। এটাই আল্লাহর ধরা।
কিছু তিক্ত কথা
এমনিতেই আমাকে নারী বিদ্বেষী বলে অনেক বোন অপবাদ দিয়েছেন। যাইহোক তাও কিছু তিক্ত কথা বলি। নারীকে আল্লাহ
পুরুষের পাঁজরের বাঁকা হাড় দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। কুর'আনে আল্লাহ বলেছেন নারীরা পুরুষের অধিনস্ত। হাদিসে এসেছে দুই
নারীর সাক্ষ্য এক পুরুষের সমান। এই সব থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যা হাদিসেও বলা হয়েছে নারীর নেতৃত্ব হারাম। তা শুধু কি রাজ্যের জন্য? রাজ্য বা সমাজের মধ্যে নারীরা যেমন পুরুষের অধিনস্ত থাকবে। পুরুষ থাকবে তার কর্তা। তেমনি অফিস বা
অর্গানাইজেশন এবং কোম্পানিতে। তেমনি বাসায় বা সংসারে। সকল যায়গায় নারী পুরুষের অধিনস্ত থাকবে। আপনিও কি সেই কাপুরুষ? যে আগে মাকে কর্তা বানিয়ে স্ত্রীর উপর জুলুম করতেন? বা এখন স্ত্রীর গোলাম হয়ে মা-বাবাকে কষ্ট দিচ্ছেন, পিটাচ্ছেন। ওয়াল্লাহি তাদেরকে লাঞ্ছিত করে আপনি কখন সুখী হতে পারবেন না। আল্লাহর আযাবকে ভয় করুন। মা-বাবার উপর হাত তুলার চাইতে মৃত্যু অধিক উত্তম।
“আগে বিয়ে হলে কন্যার পিতা-মাতারা দুঃখে কাতর হয়ে কন্যাকে বিদায় দিত। কন্যাও খুব কাঁদত। এখন যুগ বদলেছে, আমি মনে করি পাত্রের পিতা-মাতাকে এখন দুঃখকাতর হয়ে বিদায় দেয়া উচিত। এবং পিতা-মাতার বিরহে পাত্রের কাঁদা উচিত ”
বিবাহিত ও বিবাহ ইচ্ছুকদের প্রতি কিছু উপদেশ
যারা বিয়ে করবেন বা করেছেন তাদের জন্য কিছু উপদেশ রইল আমার। শক্ত হওয়ার চেষ্টা করুন। জানি আমরা পুরুষ তাই নারীর
প্রতি আমরা দুর্বল। আল্লাহ আমাদের এভাবেই তৈরি করেছেন। কিন্তু দুর্বলতা যেন এত না হয় যে আল্লাহর বিধানের লংঘন করে
ফেলি। এমন না হয় যাতে মা বাবা সহ কারোর হক নষ্ট করি। এমনও না হয় যে ওয়াইফের হক নষ্ট হয়। আমাদের মধ্যমপন্থা
অনুসরণ করতে হবে। যদি স্ত্রী সীমালংঘন করা থেকে না সরে আসে তবে তাকে তালাক দেয়ার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। তাদেরকে এটা বুঝাতে হবে, কোন হক বিনষ্ট করলে আমি তোমাকে ছেড়ে দিব (যদিও স্ত্রীকে বুঝানোর স্টেপ আছে, এখানে
তা উল্লেখ করা জরুরি নয়)।
বিয়ে করার ক্ষেত্রে সাবধান থাকবেন। কোন ভাবেই ফেমিনিস্ট মেয়েকে বিয়ে করবেন না। এরা আপনাকে টেনে জাহান্নামে নিয়ে
যাবে। আপনার ইমান, আমল, ইলম তথা পুরো দীনকে ধ্বংস করে দিবে। তারা যতই সুন্দর হোক, যতই গুনি! হোক বা হিজাবি ইসলামিক ফেমিনিস্ট হোক যারা মনে করে হিজাব পরে সব জায়িজ ফ্রি মিক্সিং জায়িজ, এ ধরনের পাত্রিকে প্রথমেই রিজেক্ট
করুন। যে সব মেয়েরা মনে করে পুরুষের উপর কর্তৃত্ব কায়েম করতে পারলে বা পুরুষকে হাতে নিতে পারলে তখনি আদর্শ স্ত্রী
হওয়া যায় এদের থেকে সাবধান থাকুন। বরং তাকে খুঁজুন যে আপনার অধিনস্ত হয়ে থাকতে চাইবে। যে স্বামীর পিছনে হাঁটবে,
তাকে অনুসরণ করবে। হ্যাঁ যদি স্বামী ভুল পথে চলে তবে তাকে শুধরে দিবে। একজন রাতের মত হবে তো একজন দিনের মত।
দিনে দিনের কাজ করবে রাত রাতের কাজ করবে। দিন যদি রাতের গোলাম হয়ে যায় তবে পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যাবে।
শয়তানি কালো অন্ধকার সবকিছুকে আছন্ন করে দিবে। তাই রাতকে দিনের অধিনস্ত থাকতে হবে। পুরুষ নারীর গোলাম নয় বরং
এমন পাত্রীর সাথে বিয়ে করবেন যে স্বামীর অধিনস্তে থাকতে চাইবে, যে আয়েশা (রা), খাদিজা (রা) এর অনুসরণ ও অনুকরণ
করতে চাইবে। অবশ্যই আপনাকেও রাসুল (ﷺ) এর অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে।
ইসলামিক বিধান মাফিক স্ত্রী আলাদা সংসার চাইতেই পারে, এর মানে এই নয় যে আপনি বাবা মাকে পৃথক করে সংসার দিবেন।
বরং স্ত্রীকে বুঝান না বুঝলে বলুন ইসলামের বিধান মাফিক আপনিও আরো তিনটি বিয়ে করতে পারেন। স্ত্রী, সন্তান বা স্ত্রীর
পরিবারের প্রতি এত বেশি আবেগী হয়ে মা-বাবার প্রতি অন্যায় করতে পারেন না। সীমালংঘন করতে পারেন না। মৃত্যুর পরে যে
আমল গুলো জারী তার মধ্যে অন্যতম হল নেককার সন্তান। নিজের বাবা-মার জন্য জন্য দুয়া করুন। নিজের সন্তানকেও এমন
ভাবে গড়ে তুলুন জাতে আপনার মৃত্যুর পরে তারাও আপনার জন্য দুয়া করবে।
বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি তাকে আপনি বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাননি বরং আল্লাহর সন্তুষ্টিকে আপনি ফিরিয়ে দিলেন। যার পদ তলে আপনার বেহেস্ত তাকে দুঃখ দিয়ে আপনি জান্নাতকে দূরে ঠেলে দিলেন। আল্লাহ অবশ্যই যালিমকে সুযোগ দেন, আর এমন
সময় এমন ভাবে ধরেন যে আর কোন ছাড় পাবেন না। ধর্ম এবং পরকালকে নাহয় সাইডে রাখলাম। মনে রাখবেন আজ
আপনারা স্বামী-স্ত্রী, কাল আপনারা পিতা-মাতা হবেন। আজকের জুলুমের পরিবর্তে কালকে আপনিও মজলুম হবেন।
আপনাকে বাবা- মা, ভাই-বোন এবং স্ত্রী এমনকি স্ত্রীর পরিবারেরও হক আদায়ে সচেষ্ট হতে হবে। একজনের হক অপরজনকে
দিতে পারবেন না। আল্লাহ আমাদের সহায় হন। আমিন।
‘একদিন একজন লোক রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর দরবারে হাযির হয়ে আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমার কাছে সবচেয়ে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিকারী কে? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে লোকটি আবারও প্রশ্ন করলো, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি আবারও জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তারপর তোমার পিতা’ (বুখারী হা/৫৯৭১; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৯১১)
আল্লাহ পবিত্র কুর'আনে বলেন,
"আপনার রব নির্দেশ দিলেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না, আর তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বল। অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো এবং বল, হে পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মনে যা আছে তা ভাল করেই জানেন। যদি তোমরা সৎ হও, তিনি মনোযোগীদের প্রতি ক্ষমাশীল" (সূরা বনী ইসরাঈল ২৩- ২৫) "আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্ট সহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার দুধ ছাড়াতে লেগেছে ত্রিশ মাস। অবশেষে সে যখন শক্তি-সামর্থ্যের বয়সে ও চল্লিশ বছরে পৌঁছেছে, তখন বলতে লাগল, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে সামর্থ্য দাও, যাতে আমি তোমার নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পসন্দনীয় সৎকাজ করি। আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমারই অভিমুখী হ’লাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম" (সূরা আহক্বাফ ১৫)
No comments